Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষ পালন ব্যবস্থাপনা

আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষ পালন ব্যবস্থাপনা
কৃষিবিদ ডক্টর এস এম রাজিউর রহমান
আমাদের অনেকের ধারণা মহিষ পালনে নদী-নালা, পুকুর-জলাশয় এবং বিস্তীর্ণ চারণ ভূমি প্রয়োজন। কিন্তু এ ধারণার বাইরেও, আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষ পালন করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন পালন ব্যবস্থাপনা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংক্রান্ত কারিগরি জ্ঞান। দেশে দুধ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য দুধালো গাভীর পাশাপাশি দুধালো মহিষ পালনের গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। দেশে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পারিবারিকভাবে অথবা আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো জাতের মহিষের খামার গড়ে উঠেছে। ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ যারা মহিষের দুধ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে; সেসব দেশে মহিষ আবদ্ধ অবস্থায় পালন হচ্ছে। মহিষের দুধে চর্বির পরিমাণ (৫.৫-৭.৫%) গাভীর দুধের চর্বির (৩.৫-৪.৫%) চেয়ে বেশি। এজন্য দুগ্ধজাত তৈরি শিল্পে মহিষের দুধের বিশেষ কদর রয়েছে। এ ছাড়াও মহিষের দুধে কোলেস্টেরলের পরিমাণ (০.৬৫ মিলিগ্রাম/গ্রাম) গাভীর দুধের (৩.১৪ মিলিগ্রাম/গ্রাম) চেয়ে কম। তাই মহিষের দুধে হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে। মহিষ কম গুণগতমানের খাদ্যকে পরিপাকের মাধ্যমে উন্নত গুণগতমানের দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম। এ ছাড়াও মহিষের বিভিন্ন আবহাওয়ায় খাপখাওয়ানোর সক্ষমতা বেশি।
আবদ্ধ অবস্থায় মহিষ পালনে নিম্নলিখিত বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে-
জাত :(Breed) বাংলাদেশে আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষ পালনের জন্য মুররাহ সংকর, গুজরাটি সংকর ও দেশি জাতের মহিষ পালন করা হয়। মুররাহ ও গুজরাটি সংকর জাতের মহিষ উত্তরাঞ্চলের গরু/মহিষের হাট থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। এ অঞ্চলে (দিনাজপুর, রাজশাহী ও রংপুর) এ ধরনের মহিষ ক্রয়-বিক্রয়ের বাজারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এসব জাত প্রতি দুগ্ধ উৎপাদনকালে (২২০-২৫০ দিনে) ১৬০০-১৮০০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
বাসস্থান : ( Housing) ছায়াযুক্ত স্থানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা রেখে প্রতিটি দুধালো মহিষের জন্য ৪-৫ বর্গমিটার জায়গার সংস্থান করে ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে। মহিষের ঘর মাটি, খড় এবং বাঁশ দিয়ে করা যেতে পারে। তবে সংকর জাতের গাভীর ন্যায় পাকাঘরে, বৈদ্যুতিক পাখা ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রেখে দুধালো মহিষ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায়। মহিষের শরীরে ঘর্মগ্রন্থি (Sweet gland) কম হওয়ার কারণে অতিরিক্ত তাপমাত্রা নির্গত করতে পারে না। এজন্য মহিষকে পুকুরে বা নদীতে দিনের অনেক সময় ডুবে থাকতে (Wallowing) দেখা যায়। অতিরিক্ত গরমে মহিষের শরীরের তাপমাত্রা, নাড়ীর স্পন্দন এবং রেচনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে গিয়ে উৎপাদন ও পুনঃউৎপাদন দক্ষতা কমে যায়। এজন্য আবদ্ধ অবস্থায় মহিষকে দিনে দুই/তিনবার গোসল করাতে হবে। তবে আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলে প্রচ- শীতের (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) সময় সপ্তাহে এক/দুইবার এবং গরমের সময় দিনে দুই/তিনবার গোসল করানো হয়। বাণিজ্যিকভাবে আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষ পালনের জন্য ঘরে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা রাখা ভালো। এক্ষেত্রে দিনে তিন/চারবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানো বা গোসল করানোর মাধ্যমে দুধালো মহিষের শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা (Feeding Management) : আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষের পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা ঘাস/সাইলেজ এবং প্রয়োজনমাফিক দানাদার খাদ্যমিশ্রণ সরবরাহ করতে হবে। এ ছাড়াও খাদ্যে লবণ ও খনিজ পদার্থ থাকতে হবে। মহিষের দুধ উৎপাদন দক্ষতার উপর নির্ভর করে মহিষের রসদে কি পরিমাণ আমিষ এবং শক্তি প্রয়োজন। মহিষের খাদ্যে বা রসদে ব্যবহৃত খাদ্যদ্রব্য সহজপাচ্য, সহজলভ্য ও দামে তুলনামূলক সস্তা হতে হবে। এ লক্ষ্যে গমের ভুসি, ভুট্টা ভাঙ্গা, সয়াবিন মিল, খেসারি ভাঙ্গা, চাল ভাঙ্গা, সরিষার খৈল, কাঁচা ঘাস, খড় প্রভৃতি খাদ্য দ্রব্য দুধালো মহিষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। মহিষের দৈহিক ওজনের ২.৫-৩% শুষ্ক খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে হবে। আঁশজাতীয় (সবুজ ঘাস/সাইলেজ/হে/খড়) এবং দানাদার খাদ্য হতে এই শুষ্ক খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে হবে। শুষ্ক পদার্থের  এক-তৃতীয়াংশ দানাদার এবং দুই-তৃতীয়াংশ আঁশ জাতীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে হবে। প্রতি কেজি গ্রহণকৃত শুষ্ক খাদ্যদ্রব্যের জন্য দুধালো মহিষকে দিনে ৫-৬ লিটার পানি সরবরাহ করতে হবে। প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য ৫-৬ গ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২-২.৫ গ্রাম ফসফরাস সরবরাহ করতে হবে। ৪.২ মিলিগ্রাম সিলেনিয়াম (Se) এবং ৪২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই (E) মিশ্রণ দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ পোস্টপর্টাম হিট (PPH) ও বাচ্চা দেবার বিরতিকাল কমিয়ে দেয় (Ezzo 1995; El-Nenaey et al1996) । এছাড়াও খাদ্যদ্রব্যের সাথে জিংক প্রদানের মাধ্যমে দুধালো মহিষকে হিট স্ট্রেস (Heat Stress) থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
মহিষকে আঁশজাতীয় খাদ্য ছোট ছোট করে কেটে প্রয়োজনীয় দানাদার মিশিয়ে প্রদান করলে খাদ্য গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যায়। এ খাদ্য দিনে দুই থেকে চারবার প্রদান করলে রুমেনের কার্যকারিতা সঠিক থাকে বিধায় দুধ উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য (চর্বি ৭%) ৬৩ গ্রাম পরিপাচ্য আমিষ (DCP), ০.৪৬০ কেজি মোট পরিপাচ্য পুষ্টি (TDN), ৩.৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২.৬ গ্রাম ফসফরাস সমৃদ্ধ রসদ তৈরি করতে হবে (ICAR,1998)। মহিষ পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বি ও সি এবং চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন কে তৈরি করতে পারে। তাই অন্যান্য ভিটামিন এ, ডি ও ই খাবারের সাথে বা আলাদাভাবে সরবরাহ করতে হবে। শুকনো খড় ও দানাদার মিশ্রিত রসদে প্রয়োজনীয় পরিপাচ্য আমিষ ও শক্তির পরিমাণ সঠিক থাকলেও ভিটামিন এ ও খনিজ পদার্থের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়। বিধায় প্রাণীকে ২৫০০০ আইইউ (IU) ভিটামিন এ ও ১০০ গ্রাম ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট (DCP) প্রদান করতে হবে (Nironjan et, al,2010)। নি¤েœ প্রস্তাবিত (Ghose and Devid,2016) দানাদার খাদ্য মিশ্রণ অনুসরণ করা যেতে পারে। ভুট্টা ভাঙা পাউডার ৩০%; খৈল (তিল/সয়াবিন/সরিষা ৩০-৩৫%; গম/ধানের ভূসি ৩৫-৩৭%; খনিজ লবণ ২%, লবণ ১%।
দুধের মহিষকে প্রতিদিন একই সময়ের ব্যবধানে খাবার প্রদান করতে হবে। ফলে রুমেনে নিয়মিত গাঁজন প্রক্রিয়া চলমান থাকে। এ লক্ষ্যে প্রাপ্ত রসদকে ৪টি ভাগে ভাগ করে সরবরাহ করা ভালো। দানাদার খাদ্য আঁশজাতীয় খাদ্যের সাথে মিশ্রিত করে মহিষকে সরবরাহ করলে খাদ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। এজন্য আঁশজাতীয় খাদ্য ছোট ছোট করে দিতে হবে।
প্রজনন ব্যবস্থাপনা (Breeding system): আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষ পালনে প্রতিবছর একটি বাচ্চা পেতে হলে প্রজনন ব্যবস্থাপনার দিকে ভালোভাবে নজর দিতে হবে। আবদ্ধ অবস্থায় বাণিজ্যিক/পারিবারিকভাবে যারা মহিষ পালন করছে তাদের প্রধান সমস্যা হল সঠিক সময়ে গাভী মহিষকে ভালো জাতের ষাঁড় মহিষ দ্বারা পাল দেয়া/কৃত্রিম প্রজনন করানো। এক্ষেত্রে আবদ্ধ পালনকারীরা নিজ খামারে ষাঁড় মহিষ রাখতে পারে অথবা সরকারি/বেসরকারি পর্যায়ে ভালো জাতের সিমেন (বীজ) পাওয়া গেলে কৃত্রিম প্রজনন করা যেতে পারে। তবে খামারিকে মহিষ প্রজনক্ষম (গরম) হবার লক্ষণ সতর্কতার সহিত লক্ষ্য করতে হবে। লক্ষণ প্রকাশ পাবার ৮-১৮ ঘণ্টার মধ্যে মহিষকে পাল দিতে হবে। মহিষ গরম হবার লক্ষণ বোঝা তুলনামূলক কষ্টকর; বেশির ভাগ মহিষ নীরব হিট (Silent Heat) প্রদর্শন করে। এক্ষেত্রে যোনিপথে হালকা পাতলা মিউকাস দেখে বুঝতে হবে মহিষ প্রজনক্ষম/গরম হয়েছে। বেশির ভাগ (৮০-৮৫%) মহিষ সাধারণত দিনের শেষভাগ হতে রাত্রির শেষভাগে গরম হয়ে থাকে। তবে দিনে অল্পকিছু মহিষ (১০-১৫%) গরম হতে দেখা যায়। খামার/বাসা থেকে দূরে গিয়ে গাভী মহিষকে ষাঁড় দিয়ে প্রজনন করালে উক্ত স্থানে (৩০-৪০ মিনিট) কিছুক্ষণ গাভী মহিষকে অবসরে রাখতে হবে। অতপর খামারে ফেরত আনতে হবে। এক্ষেত্রে গাভী মহিষকে তাড়াহুড়ো করে বা দৌড়ে আনা যাবে না।
দৈনন্দিন পরিচর্যা (Daily routine) : প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুধালো মহিষের ঘর পরিষ্কার করতে হবে ও মহিষকে ২-৩ গোসল করাতে হবে। ঘরের আবর্জনা (মলমূত্র) দূরবর্তী গর্তে ফেলতে হবে। সকালে ঘর পরিষ্কার করার পর মহিষকে গোসল দিতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনমাফিক দানাজাতীয় খাবার ও পরিষ্কার পানি প্রদান করতে হবে। অতঃপর দুধ দোহন করতে হবে। দুধ দোহন শেষ হওয়ার পর সবুজ ঘাস/সাইলেজ/হে/শুকনো খড় সরবরাহ করতে হবে। দুপুরেও মহিষের ঘর পরিষ্কার করে মহিষকে গোসল দিতে হবে এবং প্রয়োজনমাফিক আঁশজাতীয় খাদ্য প্রদান করতে হবে। পানির পাত্রে সব সময় পরিষ্কার পানি রাখতে হবে। বিকালে দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে। গরমের দিনে বিকালে পানির ঝাপটা অথবা গোসল করাতে হবে। দিনের দৈর্ঘ্যরে সাথে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ নির্ভর করে। শীতের সময় শুষ্কখাদ্য গ্রহণের পরিমাণ দৈহিক ওজনের ১.৪-১.৮% হয়ে থাকে এবং গরমের সময় ২.২-৩.০% হয়ে থাকে (Fiest,1999)। তাই সন্ধ্যা বেলা ঘরের লাইট জ¦ালালে খাদ্য গ্রহণের সময় বৃদ্ধি পায় ফলশ্রুতিতে উৎপাদন সঠিক থাকে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা (Primary health care system) : দুধালো মহিষকে সুস্থ রাখতে হলে সঠিক পুষ্টি প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত টিকা প্রদান ও কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে। মাঠ পর্যায়ে মহিষের গলাফোলা রোগ বেশি দেখা যায়। তবে ক্ষুরা, বাদলা, তড়কা রোগও দেখা যায়। এজন্য এসব রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা নিতে হবে। নিম্নলিখিত টিকা প্রদানের মাধ্যমে দুধালো মহিষকে উক্ত রোগসমূহ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।
এছাড়াও মাসে একবার ০.৫% ম্যালাথিয়ন মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করালে বহিঃপরজীবী দমন সম্ভব। প্রতি ৪-৬ মাস অন্তর কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে। তবে দুধালো মহিষকে কৃমির ঔষধ প্রদান করলে প্রথম ৩-৫ দিন দুধ উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং এ সময়ে উক্ত দুধ পান না করা ভালো। এজন্য দুধালো অবস্থায় কৃমির ঔষধ না প্রয়োগ করে শুষ্ক অবস্থায় কৃমির ঔষধ প্রদান করা ভালো।
দুধালো মহিষকে ওলান ফুলা রোগের (Mastitis) হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। ওলান ফুলা রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে (Sub-clinical mastitis) এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়না, অথচ দুধ উৎপাদন ১৫-৪৫% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এজন্য দুধ দোহনের পূর্বে গোয়ালাকে পরিষ্কারভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত দুধ উৎপাদন (Hygienic milk production) : স্বাস্থ্যসম্মত দুধ বোঝাতে পরিষ্কার, প্রাকৃতিক গন্ধ বিশিষ্ট, কাক্সিক্ষত মাত্রার ব্যাকটেরিয়াযুক্ত, সঠিক রাসায়নিক গঠন বিশিষ্ট দুধকে বোঝায়। প্রাণীর সুস্থ ও পরিষ্কার স্বাস্থ্য রক্ষাই হলো নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত দুধ উৎপাদনের মূলকথা। ওলান ফুলা (Mastitis), যক্ষা (Tuberculosis) এবং ব্রুসলোসিস (Brucellosis) রোগ থেকে দুধের মহিষকে মুক্ত রাখতে হবে। শেষোক্ত রোগ দুটি দুধের মাধ্যমে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। ওলান ফুলা রোগের নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নোংরা ও অপরিষ্কার ঘরের মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। এজন্য প্রতিদিন কাদামাটি, গোবর, মূত্র ও খাদ্যের অবশিষ্টাংশ ঘর হতে পরিষ্কার করতে হবে। ঘরে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মহিষের শরীর ধৌতকরণ (Washing), দলাই-মলাই (Grooming) করার মাধ্যমে দুধ ময়লা ও পশম মুক্ত রাখা যায়। হাত/ওলান/দুধের পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে দুধ দোহন শুরু করতে হবে। দুধ দোহনের জন্য বাচ্চা দুধের বাঁট চুষতে শুরু করার ২-৫ মিনিটের মধ্যে দুধ নিঃসরণ শুরু হয়। দুধ নিঃসরণের সাথে সাথে গোয়ালাকে দুধ দোহন কার্যক্রম শুরু করতে হবে । দুধ দোহনের পর শুকনো সূতি কাপড় দিয়ে এন্টিসেপটিক দ্রবণের (ডেটল/স্যাভলন) মাধ্যমে ওলান মুছতে হবে। দুধ দোহনের আগে ও পরে দুগ্ধ যন্ত্রপাতি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে রাখতে হবে। দুধ দোহনের জায়গা সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। দোহনের পর মহিষ যেন বসে না পড়ে এদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। এজন্য দোহনের পর মহিষকে আঁশজাতীয়/দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হবে। পচা-বাসি খাবার সরবরাহ করা যাবে না।
এসডিজি-২০৩০ লক্ষমাত্রা অনুযায়ী দেশে প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে (ডিএলএস, ২০১৮)। প্রাণী সম্পদের অন্যতম উপাদান হিসেবে দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। দুধ উৎপাদনে মহিষ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হিসেবে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে এ প্রজাতিটি অবহেলিত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে দেশে প্রায় ১৪.৯৩ লক্ষ মহিষ রয়েছে। এসব মহিষের শতকরা ৪ ভাগ উপকূলীয় অঞ্চলে, ৩২ ভাগ সমতল ভূমিতে, ১৩ ভাগ জলাভূমিতে এবং এক ভাগ পার্বত্য অঞ্চলে পালন করা হয়। এসব অঞ্চলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মহিষগুলো ছেড়ে দিয়ে অথবা অর্ধ ছেড়ে দিয়ে পালন করা হয়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান এবং মহিষ পালনে অগ্রগামী দেশসমূহ মহিষ আবদ্ধপদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে পালন করে। আর এসব দেশে মোট দুধ উৎপাদনের ৫০ থেকে ৬৫ ভাগ আসে মহিষ থেকে। আমাদের দেশে মহিষ থেকে দুধ আসে মাত্র ৪ শতাংশ। মহিষ থেকে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে পারলে অতি সহজেই আমরা দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি।

লেখক : জাতীয় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা, বাংলাদেশ। ই-মেইল:smrajiurrahman@yahoo.com মোবাইল : ০১৭১৭৯৭৯৬৯৭


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon